সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন
নিয়ামুর রশিদ শিহাব, গলাচিপা(পটুয়াখালী) সংবাদদাতা:গলাচিপা উপজেলায় ২৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ১২টি বিদ্যালয় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলছে বিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম। এতে আতঙ্কে রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাই বিদ্যালয়গুলোতে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে সাহস হারাচ্ছেন অভিভাবকরা। এমনকি ঘর বিহীন বিদ্যালয়ও রয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গলাচিপা উপজেলার মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৯৯টি। এর মধ্যে ২৮টি বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। এসব বিদ্যালয় প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী পাঠদান করছে। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি বিদ্যালয় হলোঃ ছয় আনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গলাচিপা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পল্লী উন্নয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আটখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোলখালী হালিমা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর গোলখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছোট গাবুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড় গাবুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, প: চর কাজল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য চর বিশ্বাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালাই কিশোর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পানপট্টি কাজিকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া সদর ইউনিয়নের রতনদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে শ্রেণিকক্ষ সংকট রয়েছে। তাই পাঠদান চলছে ঝুঁকিপূর্ণ আধা পাকা ভবনে। বাস্তবে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের সংখ্যা আরও বেশি হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে এসব বিদ্যালয় ভবনের ছাদের পলেস্তার খসে রড বেরিয়ে গেছে। দরজা-জানালা অনেক আগেই খুলে পড়ে গেছে, কোথাও কোথাও ছাদের বিমেও দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। বর্ষায় ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। যেকোনো মুহূর্তে ভবন ধসে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
এদিকে পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডে অবস্থিত উদয়ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদানের জন্য নেই কোনো ঘর। বর্তমানে পাঠদান চলছে ধার করা উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কক্ষ গুলোতে।
টিনশেড কক্ষগুলোর ছাউনি এতটাই নিচে যে তীব্র রোদে পাঠদান একেবারই অসম্ভব। ঐ প্রতিষ্ঠানের ৩য় শ্রেণির ছাত্র মোঃ মুসা ও ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুল ও অরন্য জানায়, অত্যধিক গরমে ক্লাশ করা খুব কষ্টদায়ক। এছাড়া প্রথম শ্রেণির ছাত্র ওয়ালিদের বাবা কবির হোসেন জানান, ‘ছাউনি খুব নিচে হওয়ায় বাচ্চাদের প্রচন্ড গরম পোহাতে হচ্ছে। নেই কোনো ফ্যানের ব্যবস্থাও। এভাবে কয়েকদিন ক্লাশ চালানো হলে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়বে। তাই নিজ উদ্দোগ্যে বাচ্চার জন্য ফ্যানের ব্যবস্থা করবে বলে জানান তিনি।
উদয়ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্বে পাঠদানের টিনশেডটি অল্প কয়েকদিন আগে উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান যৎ সামান্য টাকায় বিক্রি করে নিজের পকেটেস্থ করেছে বলে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকরা জানিয়েছে। এতে উপজেলা পর্যায়ের উর্ধ্বত¦ন কর্ত¦পক্ষের নজরে আনা হলেও নেয়া হয়নি কোনো ধরনের ব্যবস্থা।
রতনদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঃ বারী খান জানান, তার বিদ্যালয়ের আধা পাকা ভবনটি অধিক ঝুকিপূর্ণ। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা কেন্দ্রের জন্য ১০টি কক্ষ প্রয়োজন হলেও আছে মাত্র ৬টি। এছাড়া ১শিফটের বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় আড়াইশ’র কাছাকাছি। এতে কক্ষ সংকটে বিদ্যালয়ের পাঠদান মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে।ছয়আনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, প্রায় সাত বছর আগেই বিদ্যালয়টি মৌখিকভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও এখনো ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান চলছে। বৃষ্টি এলে অলিখিত ছুটি হয়ে যায় বিদ্যালয়।
পানপট্টি কাজিকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা ঝুকিপূর্ণ শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতে ভয় পায়, বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়ে আমাদের পাঠদান করতে হচ্ছে।এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) মো. মিজানুর রহমান বলেন, এরই মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলোর তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলে নতুন ভবন নির্মাণ ও সংস্কার করা হবে।
Leave a Reply